১) নাম | : | শহী দ ডাঃ এ. এফ. এম. আবদুল আলীম চৌধুরী। |
জনম তারিখ / সময় | : | ৩ বৈশাখ, সোমবার, ১৩৩৫। সকাল ১১টা। |
জনমস্থান ও পৈত্রিক নিবাস | : | গ্রাম : খয়েরপুর, উপজেলা : অষ্টগ্রাম, জেলা : কিশোরগঞ্জ, বাংলাদেশ। |
পিতৃ নাম ও পেশা | : | মরহুম আবদুল হেকিম চৌধুরী, জেলা স্কুল পরিদর্শক। |
মা | : | মরহুমা সৈয়দা ইয়াকুতুন্নেছা। |
শিক্ষ্যাগত যোগ্যতা | : | ক. ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৫, কিশোরগঞ্জ হাই স্কুল,কিশোরগঞ্জ। খ. আই.এস.সি. ১৯৪৮, ইসলামিয়া কলেজ, কোলকাতা। গ. এম.বি.বি.এস. ১৯৫৫, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা। ঘ. ডি.ও. ১৯৬১, রয়্যাল কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স্ অফ লন্ডন এ্যান্ড রয়্যাল কলেজ অব সার্জন্স্ অফ ইংল্যান্ড। |
কর্ম অভিজ্ঞতা | : | ক. হাউজ ফিজিসিয়ান, হাউজ সার্জন ও রিসার্চ এ্যাসিস্ট্যান্ট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা। খ. অনারারি ক্লিনিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্ট, মুরফিল্ডস্ আই হসপিটাল, লন্ডন। গ. সিনিয়র হাউস অফিসার (চক্ষু), রয়্যাল আই এ্যান্ড ইয়ার হসপিটাল, ব্র্যাডফোর্ড। ঘ. রেজিষ্টার (চক্ষু), হুইপস ক্রস হসপিটাল, লন্ডন এবং সেন্ট জেম্স্ হসপিটাল, লন্ডন। ঙ. কনসালট্যান্ট অপথালমিক সার্জন, কুমুদিনী হাসপাতাল,মির্জাপুর। চ. এসোসিয়েট প্রফেসর : ১. আই.পি.জি.এম.আর. ঢাকা। ২. ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা। ৩. রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী। ৪. স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা। |
২) নামঃ কাজী আব্দুল বারী
কেউ খাবে কেউ খাবেনা ! তা হবেনা তা হবেনা ! শোগান আর প্রাণঞ্জল ভাষায় ‘‘আমার মৃত্যু যেন স্বাভাবিক মৃত্যু না হয়। আমার কাফনের কাপড় যেন রক্তে ভেজা থাকে । এ দেশের নির্যাতিত নিপীরিত কৃষক শ্রমিক মেহনতী মানুষের অধিকার আদায়ের মিছিলের সামনের সারিতে দাড়িয়ে প্রতিশক্তির বুলেটের আঘাতে যদি আমার মৃত্যু হয় ,তবেই জীবনকে ধন্য মনে করব ।এমন দৃপ্ত কন্ঠের বক্তব্য দিয়ে যিনি শোষকের ভিত কাপিঁয়ে বঞ্চিত মানুষকে অধিকার আদায়ের মিছিলে সমবেত করে নিজেকে জেল জুলুম ও বেত্রদন্ড আর প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট ক্ষমতার খড়গ তলে জীবন উৎসর্গ করে বৃহত্তম ময়মনসিংহ তথা বাংলা দেশের বিভিন্ন প্রামেত্মর মুক্তিকামী স্বাধীনচেতা বাঙ্গালীদেরকে প্রতিটি গনতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়ীক সংগ্রামে আপোষ হীন নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি জননেতা মরহুম কাজী আব্দুলবারী জনতার প্রিয় বারী ভাই আজ তার ৭৮ তম জন্ম ও ২৮ তম মৃতুবার্ষি।
প্রচার বিমুখ এই বরেণ্য রাজনৈতিকের দেশপ্রেম দৃঢ় মনোবল আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব আজ চরম ভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে সমাজে । আবার স্বদলীয়ভাবে ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে ও তিনি মৃত্যুর পর চরম ভাবে উপেক্ষিত ও অবহেলিত বলে মনে করেন দলীয় কর্মীরা ।
১৯৩৩ সালের ২১ শে ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম সদরের সম্ভামত্ম কাজী পরিবারে তার জন্ম । অষ্টগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক ,ময়মনসিংহ জেলাবারের অন্যতম আইনজীবী মরহুম কাজী আব্দুল আওয়াল ও গৃহিনী মরহুম আফরোজা খাতুন দম্পতির জৈষ্ঠ সমত্মান কাজী আব্দুল বারী । পিতার পেশাগত কারনে কাজী বারী’র শৈশব ও শিক্ষা জীবন শুরু হয় ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে । ৮ বিষয়ে লেটার নিয়ে মেট্রিক পাশ করা এই মেধাবী ছাত্র ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন বেগবান করতে ময়মনসিংহ শহরে ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়ে মিছিলে অংশগ্রহন করায় তিনি প্রথম গেপ্তার ও কারা বরন করেন । মুক্তি পেয়ে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের ( বর্তমানে আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয়) ২ বার ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে পাকিসত্মান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফন্টের নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখার অপরাধে তিনি ২য় বার গ্রেপ্তার হন। ১৯৫৮ সালে পাকিসত্মান ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হলে তিনি যোগদান করেন এবং ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও পুর্ব পাকিসত্মান ছাত্রলীগের সহ সভাপতি নির্বাচিত হন । সে সময় করাচিতে এক ছাত্র সম্মেলনে পুর্ব পাকিসত্মানের ছাত্র/ছাত্রী ও জনজীবনের দুরাবসত্মার চিত্র তোলে ইংরেজী বক্তব্যে কাজী বারী’র মেধা কঠিন মনোবল ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দৃষ্টিকারে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের আর প্রতিহিংসার স্বিকার হন সরকার যন্ত্রের । বার বার গ্রেপ্তার কারাবরণ ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কারনে মেধাবী এই ছাত্র নেতার শিক্ষাজীবন বেশিদূর এগোতে পারেনি । পরে পাকিসত্মান ন্যশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দিলে পুর্ব পাকিসত্মান কেন্দ্রীয় ন্যাপের সদস্য ও জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন ।
১৯৫৮ সালের সামরিক শাসক আইয়ুব খান রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে ময়মনসিং সার্কিট হাউসে সমাবেশ করার কারনে তার বিরুদ্ধে পাকিসত্মান সরকার হুলিয়া জারি করেন । তিনি রাজনৈতিক কৌশলে আত্নগোপনের কিছু দিন পর গ্রেপ্তার হন সামরিক আদালতে তিন বছর জেল ও ১০ টি বেত্রদন্ডে দন্ডিত করেন । অন্যায় এ শাসিত্ম বাতিলের জন্য তাদানিমত্মন সোভিয়েত ইউনিয়ন(রাশিয়া), চীন, ভোলগেরিয়া সহ বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক দেশ পাকিসত্মান সরকারকে অনুরোধ করা সত্বেও দন্ড কার্য্যকর হয় । বেত্রদন্ডের আঘাতে জীবনের মত বধির হয়ে যান তিনি ।
১৯৬৩ সালে মুক্তি পেয়ে আবার বৃহত্তম ময়মনসিংহের দলীয় কর্মকান্ডে আত্ননিয়োগ করে প্রগতিশীল আন্দোলন বেগবানের জন্য হাওরাঞ্চলে বিশাল কর্মী বাহিনী ঘরে তোলেন ।৬৯ এর গনঅভুত্থানে ময়মনসিংহ অঞ্চলের গনজাগরন সৃষ্টি করেন ।৭০ এর জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য পদে প্রতিদ্ধন্দিতা করেন ।
৭ ই মার্চ জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষনে দেশ যখন উত্তাল হয়ে উঠে তখন কাজী বারী কিশোরগঞ্জ সাংগঠনিক জেলা ও হাওরাঞ্চল সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনিত হন । ২৬ মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার একটি তার বার্তা পেয়ে কাজী বারী অষ্টগ্রাম সদর ও পুর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের হাট বাজারে শত শত কর্মী জড়োকরে তার বার্তার বিষয় বস্ত্ত তোলে ধরে কর্মীদের যুদ্ধে অংশগ্রহনের আহববান করেন । প্রথমে ইপিআর থেকে আগত জনৈক হাফীজ উদ্দিনের তত্তাবধানে এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন শুরু করেন । পরে অনেক ছাত্র যুবক নিয়ে তিনি ভারতে চলে যান । সেখানে মেঘালয় ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন,যুদ্ধে প্রেরণ ও ক্যাম্পে অন্যতম দ্বায়িত্ব পালন করেন।
হানাদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অষ্টগ্রাম এসে প্রথমে কাজী বারী’র বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে । পরে তার ভগ্নিপতি ন্যাপ নেতা আবুল খায়ের খান কে হত্যা সহ আত্নীয় স্বজনদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে হাওরাঞ্চলে ধ্বংস লীলা শুরু করে।
স্বাধীনতাউত্তর তিনি অষ্টগ্রামে এসে ন্যাপ রাজনীতিতে স্বক্রিয় হন । দলীয় কর্মকান্ড ছাড়াও কৃষক সমিতি সহ নানা সমাজকল্যাণ সংগঠন করে গনতান্ত্রিক ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে হাওরের বিভিন্ন উপজেলায় ঘুষ দুর্নীতি আর দির্ঘ্যসুত্রিতা প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং বল্লী গায়েলা ও ঝাজর বিলের ইজারা প্রথা বাতিল, জেলে অত্যাচার বন্ধ হয়ে যায়।তখন জেলেরা ভাষান পানিতে অবাদে মাছ ধরার সুযোগ পায় । সে সময়কে প্রগতিশীল রাজনীতির তীর্থভহমি হিসেবে পরিচিত হয় হাওরাঞ্চল । কাজী আব্দুল বারী’র ডাকে হাওর জনপদের বিভিন্ন সভাসমাবেশে উপস্থিত হন অধ্যাপক মোজাফর আহম্মেদ, মতিয়া চৌধূরী (বর্তমান কৃষি মন্ত্রী), পংকজ ভট্টাচার্য্য ,চৌধূরী হারুন অর রশিদ , পীর হাবিবুর রহমান , মাওঃআহমদুর রহমান আজমি ,কমরেড মনিসিংহ অধ্যক্ষ ফজলুল হক খন্দকার , অনিমা সিংহ , অজয় রায় ,প্রমূখজাতীয় বাম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্ধ ।
৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজী বারী ন্যাপের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন । ৭৫ এর ১৫ ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর স্বপরিবারে নিহত হলে তিনিই প্রথম ব্যাক্তিগত প্রতিবাদ করেন এবং আত্নগোপন করেন । সে সময় কাজী বারী’র মামা রাষ্ট্রপতি! খন্দকার মোসত্মাক আহাম্মদ বঙ্গভবনে ডেকে নিয়ে মন্ত্রী পরিষদে যোগ দিতে বলেন । কাজী বারী সেই প্রসত্মাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে গ্রেপ্তার ও জেলবাসী হন । জেলে রক্তচাপ ,ডায়বেটিস,কিডনী,রোগে আক্রামত্ম হয়ে অসুস্থ অবস্থায় মুক্তি পেয়ে অষ্টগ্রামে আসেন ।আজীবন সংগ্রামী রাজনৈতিক প্রবাদ পুরুষ ১৯৮৩ সালের ২১ ডিসেম্বর ইমেত্মকাল করেন। সংসার জীবনে সহধর্মীনি রাশেদা বারী দু’ছেলে কাজী শফিকুল আওয়াল কল্লোল ও কাজী রফিকুল আওয়া্ল বিপুল , দু’ মেয়ে কাজী হামিদা আফরোজ ও কাজী নন্দিতা বারী ।তাদের দাবী নির্মোহ প্রতিযশা এই নেতা রাজনৈতিক দৈন্দ্যতার কারনেই প্রচার মাধ্যমে গুরুত্ব পায়না কিন্তু তার আদর্শ উজ্জিবিতরা তাকে নিয়ে আজও গর্ববোধকরে।
রাজনৈতিক কাব্যগাথা অসম্প্রদায়িক দৃঢ় চেতানার নেতা কাজী আব্দুল বারী’র ৫০ বছর বর্নাঢ্য জীবন পথে নানা অত্যাচার অবিচার , বেত্রদন্ড আর ষোল বছর জেল জুলুম সত্যেও আদর্শেররাজনৈতিক আকাশে তিনি উদ্ভাসিত এক নক্ষত্র ।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS